রেলকর্মীর বাসা মেরামতে খরচ ২৮ লাখ টাকা!

রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলীয় জিএমের দপ্তরের চতুর্থ শ্রেণির এক কর্মচারীর বাসা মেরামতের জন্য ২৮ লাখ টাকা বরাদ্দ দেন প্রধান প্রকৌশলী। বিপুল অঙ্কের এ অর্থ বরাদ্দ দেওয়ার জেরে রেল অঙ্গনে শুরু হয় তোলপাড়। শেষ পর্যন্ত অভিযোগ যায় মন্ত্রণালয় ও রেল ভবনে। অভিযোগের ভিত্তিতে ঘটনা তদন্তে দুই সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে।

এ ঘটনায় রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের প্রধান প্রকৌশলী আবদুল জলিল ফেঁসে যেতে পারেন বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। গত ২৬ মে গঠিত দুই সদস্যের কমিটিতে প্রধান করা হয়েছে রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের বিভাগীয় প্রকৌশলী-১ শেখ নাইমুল হককে। কমিটির অপর সদস্য বিভাগীয় ভূ-সম্পত্তি কর্মকর্তা কিসিঞ্জার চাকমা।

কমিটি গঠনের সাত কার্যদিবসের মধ্যে রিপোর্ট দিতে বলা হলেও গতকাল মঙ্গলবার কমিটির আহ্বায়ক আমাদের সময়কে জানান, তদন্তের প্রাথমিক কাজ শুরু করেছেন তারা। অভিযোগ রয়েছে, রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলে বাসা, বাংলো, সড়ক, অফিস ভবন মেরামতের নামে কোটি কোটি টাকা লুটপাট হয়।

প্রকৌশল বিভাগের কর্মকর্তাদের যে ঠিকাদার যত বেশি ঘুষ দিতে পারেন, সেই ঠিকাদার তত বেশি কাজ পান। এর পর কাজে নয়-ছয় করে টাকা হাতিয়ে নেন ঠিকাদাররা। মেরামত কাজে বরাদ্দের এক তৃতীয়াংশের চেয়েও কম অর্থ ব্যয় করে বিল নেওয়ার অভিযোগও রয়েছে। এ ছাড়া নজির রয়েছে কাজ না করেও বিল তুলে নেওয়ার।

জানা গেছে, চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীর বাসা মেরামতে ২৮ লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়ার পর গত ১৩ মার্চ আলমগীর, মনির হোসেন, শাহাদাত হোসেন, মোহাম্মদ জুয়েল ও মো. জসিম নামে কতিপয় ঠিকাদার রেলমন্ত্রী বরাবর একটি অভিযোগ দেন। অবশ্য ততদিনে মেরামত কাজ সম্পন্ন হয়ে যায়। অভিযোগকারীরা তাদের দেওয়া চিঠিতে উল্লেখ করেছেন, রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের জিএমের পরিচয় ব্যবহার করে সাইফুল নামে এক ঠিকাদার কাজটি করেছেন। অধিকাংশ মেরামত কাজে দুর্নীতি হয় বলেও অভিযোগপত্রে উল্লেখ করা হয়।

রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের জিএম সৈয়দ মো. ফারুক আহমেদ আমাদের সময়কে বলেন, আমার জানা মতে, একজন কর্মচারীর বাসা মেরামতে ২৮ লাখ টাকা দেওয়া হয়নি। চার থেকে পাঁচটি পরিবারের জন্য এ বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। বিস্তারিত জানতে প্রধান প্রকৌশলী আবদুল জলিলের সঙ্গে কথা বলার পরামর্শ দেন তিনি। তবে প্রধান প্রকৌশলীর মোবাইল ফোনে একাধিকবার কল দেওয়া হলেও তিনি রিসিভ করেননি।

তার অফিস সহকারী মো. দিদারকে বিষয়টি অবহিত করলে তিনি আমাদের সময়কে বলেন, ‘আমি স্যারকে বলেছি। মাগরিবের নামাজ পড়ে তিনি কল দেবেন।’ কিন্তু নির্ধারিত সময় পর্যন্ত অপেক্ষার পরও কল না আসায় এ প্রতিবেদক ফের তার মোবাইল ফোনে একাধিকবার কল দিলেও তিনি রিসিভ করেননি। ঠিকাদার সাইফুলের মোবাইল ফোনেও একাধিকবার কল দেওয়া হয়। তিনিও রিসিভ করেননি।

অভিযোগ রয়েছে, সিআরবি এলাকায় রেলের ভিআইপি রেস্ট হাউস মেরামতের জন্য কয়েকটি ধাপে টেন্ডার ছাড়াই প্রায় ৮০ লাখ টাকার কাজ বরাদ্দ দেন প্রধান প্রকৌশলী আবদুল জলিল। এরই মধ্যে বেশ কিছু কাজ করিয়ে নিয়েছেন মৌখিক নির্দেশে। একই ঠিকাদারকে সব কাজ দেওয়ার আশ্বাস দিয়ে ২০ শতাংশ হারে অগ্রিম ঘুষও নিয়েছেন তিনি।

আপনি আরও পড়তে পারেন